কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়া, কুমারখালীতে গলায় দাগসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত থাকা ইতি খাতুন (৩০) নামের এক গৃহবধূ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত একটার দিকে উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের নগরকয়া গ্রামের স্বামীর বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তি ওই গ্রামের ভ্যানচালক আশরাফ হোসেনের স্ত্রী।
তবে ওই গৃহবধূর বাবা ও স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ ইতিকে তার স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুরি মিলে পিটিয়ে ও গলাটিপে হত্যা করেছেন। তার বাম হাত ভাঙা, আঘাতে মাথার একাংশ ফোলা, গলায় কালো দাগ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত চিহৃ রয়েছে। ইতিকে হত্যার কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনরা।’
আজ রোববার সকালে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত গৃহবধূর স্বামী আশরাফ হোসেন ও শ্বশুর শুকুর আলীকে আটক করেন পুলিশ। এবং সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সকালে সরেজমিন ওই গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে সরেজমিন দেখা গেছে, স্বামী ও শ্বশুর পলাতক রয়েছেন। শ্বাশুরি বসতঘরের সামনে বসে আছেন। আর তাকে ঘিরে কয়েকজন স্বজন বসে আছেন। বাড়িতে কোনো শোকের মাতম নেই। পান্টি পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, স্বামীর ভ্যানের ওপর খেজুর পাতার তৈরি পাটি দিয়ে মোড়ানো রয়েছে নিহত গৃহবধূর মরদেহটি।
নিহতের স্বজনরা জানায়, প্রায় বছর আগে পান্টি ইউনিয়নের নগরকয়া গ্রামের শুকুর আলীর ভ্যানচালক ছেলে আশরাফ হেসেনের সাথে সাথে একই বড় ভালুকা গ্রামের ভ্যানচালক সামছুল মন্ডলের মেয়ে ইতি খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের কোলজুরে প্রায় ৩ বছরের অনিক নামের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। পারিবারিক কলহের জেরে আশরাফ প্রায়ই ইতিকে মারপিট করতেন। মারপিটের শিকার ইতি খাতুন প্রায় চলে যেতেন বাবার বাড়ি। প্রায় ১৫ দিন ইতির সাথে বাবার কোনো যোগাযোগ ছিলোনা।
তারা আরো জানায়, গত শনিবার রাতে হঠাৎ ইতির মৃত্যুর খবর শুনে শ্বশুর বাড়িতে ছুটে যান তার বাবা ও অন্যান্য স্বজনরা। গিয়ে দেখেন ইতির বাম হাতভাঙা, মাথায় আঘাত ফোলা, গলায় দাগসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহৃ।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে রাত একটার দিকে মরদেহটি শ্বশুর বাড়ির নিজঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির একটি হাত ও মাথায় আঘাত চিহৃ ও ফোলা রয়েছে। গলায় শ্বাসরোধের দাগ রয়েছে। তাকে শনিবার দিনের কোনো একভাগে শ্বাসরোধ ও পিটিয়ে হত্যা করা হতে পারে। লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহতের স্বামী ও শ্বশুরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
এব্যাপারে নিহতের বাবা সামছুল মন্ডল বলেন, মেয়েকে তার স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুরি মিলে পিটিয়ে ও গলাটিপে হত্যা করেছেন। মেয়ের বাম হাত ভাঙা, মাথা ফুলে গেছে। গলায় কালো দাগ। আমি গরিব মানুষ। মেয়ে হত্যার বিচার চাই। থানায় মামলা করব।
অভিযোগ অস্বীকার নিহত গৃহবধূর শ্বাশুরি
আনোয়ারা খাতুন বলেন, ব্যাটার (ছেলের) বউয়ের মিরকি (মৃগ) ব্যারাম (রোগ) ছিলো। কাল (শনিবার) রাতে মিরকি ব্যারাম রোগেই মারা গেছেন। পুলিশ আমার ছেলে, স্বামী, ভ্যান ও লাশ নিয়ে গেছেন।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসিন হোসাইন বলেন, রাতে খবর পেয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে রোববার সকালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির একটি হাত ও মাথায় আঘাত চিহৃ ও ফোলা রয়েছে। গলায় শ্বাসরোধের দাগ রয়েছে। তাকে দিনের কোনো একভাগে শ্বাসরোধ ও পিটিয়ে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
তিনি আরো বলেন, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গৃহবধূর স্বামী ও শ্বশুরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।