কামরুজ্জামান শিমুল বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি:
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বঙ্গোপসাগরের বুকে কুঙ্গা এবং মরা পশুর নদীর মোহনায় জেগে ওঠা সুন্দরবনের আলোর কোল দুবলার চরে শুরু হয়েছে সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীদের সাঁতার আর সমুদ্র স্নানে লক্ষ প্রাণের মিলন মেলা। প্রতিবছরের কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আজ রবিবার (৬ নভেম্বর) শুরু হওয়া রাস উৎসব সোমবার পূজা অর্চনা এবং ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোরে সাগরে স্নানের মাধ্যমে শেষ হবে। এই সময়ে সুন্দরবনের দুবলার সাগর সঙ্গমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাঙ্গলিক পূজা ও রাসের পূন্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে। তবে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে ২০২১ সাল থেকে স্থায়ীভাবে রাসমেলা বন্ধের নির্দেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সে কারণে পূন্যস্নান হলেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না রাস মেলা।
দুর্গাপূজার পর পূর্ণিমাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে ‘লীলা’-য় মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। আর সেই থেকেই বাংলা এ মাসের পূর্ণিমাতে ‘রাস-লীলা’ পালিত হয় দুবলার চরে। আবার অনেকের মতে, কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের পর শ্রীকৃষ্ণ পাপমোচন ও পূন্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকেই শুরু হয় ‘রাস উৎসব’। আর সে কারণে সমুদ্র স্নানের মাধ্যমে তাদের সকল পাপ মোচন হয়ে যায় বলে ধারণা রয়েছে মেলায় আগত সকল পূর্ণর্থীদের।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাস উৎসবের তিনদিন (৬,৭ ও ৮ ই নভেম্বর) অন্য ধর্মের কোন লোক দুবলার চরে যেতে পারবে না। রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে শুধুমাত্র সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীদের পূজা ও পুণ্যস্নানে কোন বাধা নেই। তাছাড়া রাস-মেলা উপলক্ষে সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলে প্রচুর লোকসমাগম হয়। ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয। সে কারণে বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দুবলার চরে রাস মেলা বন্ধ করেছে মন্ত্রণালয়। রাস উৎসব উপলক্ষে বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে বনবিভাগ। কারো কাছে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটার কুড়াল, করাত ইত্যাদি কিছু পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সমুদ্র স্নানে আগত পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্রের মূলকপি সঙ্গে রাখতে হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।