কামরুজ্জামান শিমুল বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি:
বর-কনের দাম্পত্য জীবনকে যেকোনো ধরনের অকল্যাণ বা অপশক্তির অনিষ্ট থেকে মুক্ত রাখার কামনা থেকেই গাত্রহরিদ্রার লোকাচার পালন করা হয়। বর্তমানে বিয়ের চেয়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানই বেশি জাকজমকপূর্ণ হয়। বর-কনে উভয়েরই গায়ে হলুদ দেওয়ার প্রথা যেন দিন দিন আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিচ্ছে। গায়ে হলুদের দিনে সকলেই কাঁচা হলুদ লাগিয়ে নাচ-গান’সহ বাহারি আয়োজনে বিয়ের প্রাক আয়োজন করে তোলে উৎসব মুখর। তবে কেন বিয়ের আগে পালিত হয় গায়ে হলুদের এই রীতি? তা হয়তো অনেকেরই অজানা। তবে নিশ্চয় কিছু কারণ রয়েছে বিয়ের আগে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান প্রচলনের। মূলত আত্মীয়-স্বজনরা হবু বর ও কনেকে সুখী বিবাহিত জীবনের জন্য আশীর্বাদ করেন গায়ে হলুদ মাখিয়ে।
অতীতে যখন বিউটি ট্রিটমেন্ট ছিলোনা তখন বর কনের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে সুন্দর দেখানোর জন্য হলুদ ব্যবহার করা হতো। হলুদে থাকা পুষ্টিগুণ ত্বকে তাৎক্ষণিক উজ্জ্বল আভা তৈরী করতে সক্ষম বিধায় বিয়েতে হলুদের ব্যবহার হয়।
হলুদের শক্তিশালী এক্সফোলিয়েটিং অ্যাজেন্ট ত্বককে বিষমুক্ত করে তোলে। তাছাড়া হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ও মাথাব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। হলুদ লাগানোর পর ত্বক যখন ধুয়ে ফেলা হয়, তখন ত্বকের মৃত কোষ গুলো দূর হয়ে যায়। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, হলুদ শরীর ও মনকে শুদ্ধ করে। বিবাহিত জীবনে বিয়ের আগে হলুদ লাগানোর মধ্য দিয়ে দুজনের মন ও শরীরে সুস্থতা মেলে। বর ও কনের স্নায়ুকে শান্ত রাখার প্রধান ট্রিটমেন্ট এই হলুদ।
প্রাচীন কাল থেকে এই হলুদকে বলা হয় প্রাকৃতিক হেক্সোসল বা ক্লিনজার। বিবাহের অনুষ্ঠানে একজনের শরীরের জীবাণু যাতে আরেকজনের শরীরে সহজে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে কারণেও হলুদ ব্যবহার করা হতো। বিবাহের পুর্বে শরীরকে জীবানুমুক্ত বা বিভিন্ন রোগের সংক্রমন মুক্ত করার জন্যই গায়ে হলুদ দেয়া হতো। তাছাড়া রূপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে কাঁচা হলুদ প্রতিনিয়তই ব্যবহার করা হতো। গায়ে হলুদ দেয়া মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ন দৈনন্দিন অভ্যাস যার সাথে ধর্মের কোন যোগসুত্র নেই। ইসলাম ধর্মমতে এটা কোনো গুনাহের কাজ নয়, তবে ইবাদতও নয়। সংস্কৃতি হিসেবে সৌন্দর্যের জন্য এটা করা যেতে পারে। ছেলে মেয়ে অবাধে মিলে মিশে গায়ে হলুদ দেওয়াকে ইসলাম সমর্থন করে না। হিন্দু ধর্মে হলুদ ও চন্দন মুলত তাদের পবিত্র দেবদেবীদেরকে সেবা করার উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যাইহোক, মাছ ভাজার আগে যেমন ভালো করে হলুদ মেখে কিছুক্ষন রেখে দিতে হয়। তেমনি বিয়ের সময়ও বর কনেকে হলুদ মেখে প্রস্তুত করা হয় নতুন জীবনের জন্য।