কামরুজ্জামান শিমুল বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি:
বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত ষাটগুম্বজ মসজিদ ও আশে পাশের এলাকায় অবস্থিত তৎকালীন নিদর্শন দেখতে প্রতিদিন দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা। পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব ছাড়াও শিক্ষা সফরেও প্রতিনিয়ত আসছে শিক্ষার্থীরা। খানজাহানের হাজার হাজার ভক্তবৃন্দও আসে এই ঐতিহাসিক মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়া দীঘিতে গোছল করে নামাজ পড়ার জন্য। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা দীঘিতে পবিত্র হয়ে মসজিদে অথবা পাথরের কাছে বসে ইট পাথরে চুমু খেয়ে মনোবাসনা পূরণের লক্ষে প্রার্থনা করে। পদ্মা ও বেকুটিয়া ব্রিজের দ্বার উম্মোচনের পর থেকে বহুগুনে বেড়েছে দর্শনার্থী। দেশের যে কোনো জায়গা থেকে স্বল্প সময়ে চলে আসা যাচ্ছে এই খলিফাতাবাদ খানজাহানের পুণ্যভূমির বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে। তবে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি তাদের জন্য থাকা খাওয়া সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। প্রচার প্রচারণার কারণে দর্শনার্থীদের কাছে অদেখা রয়ে যায় সিংগাইর মসজিদ, খান জাহানের সমাধি, বিবি বেগনি মসজিদ, দশগুম্বজ মসজিদ , নয় গুম্বজ মসজিদ, চুনখোলা মসজিদ, সাবেকডাঙ্গা মসজিদ, অযোধ্যা বা কোধলার মঠ, খানজাহানের বসতভিটা সহ অসংখ্য সুলতানি আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
বিভিন্ন দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, দর্শনার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ জীবনে এই প্রথমবার দেখতে এসেছে এই ষাটগুম্বজ মসজিদ। আবার কেউ কেউ একাধিকবার এসেছে এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে। তবে তাদের অভিযোগ পর্যাপ্ত বাথরুমের অভাব রয়েছে এই ক্যাম্পাসের মধ্যে। কিডস জোন রয়েছে খুবই স্বল্প জায়গার মধ্যে। দর্শনার্থীরা অসুস্থ হলে চিকিৎসাসেবা পাওয়া দুস্কর বলেও জানিয়েছে তারা। সুস্বাদু কিংবা ভালো মানের খাবারের ব্যবস্থা নেই এই এলাকায়, এমনকি অভাব রয়েছে দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা। গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যার কোথাও উল্লেখ করেন তারা।
এবিষয়ে জেলার টুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, ষাটগুম্বজ মসজিদ, খানজাহানের মাজারসহ এই এলাকার অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। এই মসজিদ এলাকায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে থাকা নিরাপত্তাবাহিনী ও কর্মচারী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। পুরো ক্যাম্পাস এলাকা রয়েছে সিসিটিভির অন্তরভুক্ত। তাছাড়া আনসার বাহিনীর একদল সদস্যও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। দশনার্থীদের মধ্যে অনেককেই দীর্ঘ ভ্রমণ কিংবা শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায়। আমরা স্থানীয় চিকিৎসকের মাধ্যমে তাদের সেবা দিয়ে থাকি। তবে প্রত্নতত্ব বিভাগের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক থাকলে দর্শনার্থীদের সেবাদান দ্রুত সম্ভব হবে।
বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মোহাম্মদ যায়েদ দর্শনার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে বলেন, পদ্মা ও বেকুটিয়া ব্রিজের দ্বার উম্মোচনের পর থেকে বহুগুনে বেড়েছে দর্শনার্থী। আমরা দর্শনার্থীদের সর্বচ্চো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে দিঘির উত্তর পাশে ওয়াক ওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কেউ অসুস্থ হলে স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ষাটগুম্বজ মসজিদ নিয়ে কৌতুহলী দর্শনার্থীদের হাজারো প্রশ্নের জবাবও দিতে হয় আমাদের। মসজিদ ও তার চারপাশে সৌন্দর্য বর্ধন ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। তবে এই এলাকার অন্যান্য নিদর্শন সমূহ দর্শনার্থীদের জানানোর জন্য বিভিন্ন উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ করা হবে। লিফলেট বিতরণ করা যায় কি না ভেবে দেখা হবে। দর্শনার্থীদের থাকা ও খাবারের ম্যান উন্নয়নের জন্য হোটেল মালিক সহ স্থানীয় সকল ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে।