এইচ এম তৌফিকুর রহমান
বাংলাদেশে ধর্ষণ,হত্যাসহ যেসব ঘটনায় মৃতদেহ ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়, সেসব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা এবং প্রোফাইল তৈরী করে থাকে সিআইডি। সিআইডির এই ডিএনএ পরীক্ষা প্রথম শুরু হয় ২০১২ সালে ডিএনএ টেস্টিংয়ের ল্যাব স্থাপনের মধ্য দিয়ে। সে অনুযায়ী সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ বিভিন্ন মামলার আলামত সংগ্রহ করে আসছিল।২০১৯ সালে পরীক্ষার জন্য কয়েকটি এইচভিএস (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই বছরের মার্চ থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে আনা নারীদের মৃতদেহে একজন পুরুষের শুক্রাণুর উপস্থিতি পেয়ে বিস্মিত হয় সিআইডি।উন্মোচন হয় তদন্তের নতুন দ্বার। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আলোচনা শুরু হয় নেক্রোফিলিয়া নিয়ে।
নেক্রোফিলিয়া [Necrophilia] শব্দের শুরুটা এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে । নেক্রোস অর্থাৎ মৃত (nekros; dead) এবং (philia; love) ফিলিয়া অর্থাৎভালোবাসা বা আসক্তি। ‘নেক্রোফিলিয়া‘ এক ধরনের মানসিক যৌন ব্যাধি। যারা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের বলা হয় নেক্রোফাইল [Necrophile] বা নেক্রোফিলিয়াক [Necrophiliac]; নেক্রোফাইলরা মৃতদেহের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। অর্থাৎ মৃত দেহের প্রতি যারা শারীরিক আসক্তি অনুভব করে তারা এই বিরল রোগে ভুগে থাকে।
মূলত যারা মৃতদেহের পাশাপাশি থাকেন তাঁরাই এহ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বেশি। কিন্তু এর বাইরেও সিরিয়াল কিলার কিংবা রেপিস্টরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে ১৯৮৯ সালে ১২২ জন নেক্রোফইল ব্যক্তির তথ্য পর্যালোচনা করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ঐ গবেষণায় বলা হয়, ‘বাধা দেবে না বা প্রত্যাখ্যান করবে না’, মূলত এমন যৌন সঙ্গী পাওয়ার বাসনা থেকে মরদেহের সাথে যৌন সংসর্গ করে থাকে নেক্রোফাইলরা।
অনেক সময় তারা এমন পেশা নির্ধারণ করে, যেখানে মরদেহের আশেপাশে থাকার সুযোগ থাকে তাদের।
তবে গবেষণার জরিপে পর্যালোচনা করা ১২২ জনের কয়েকজন মরদেহের আশেপাশে থাকার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও হত্যা করার পর মৃতদেহের সাথ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে উঠে আসে প্রতিবেদনে।
ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছেন এমনি ভয়ংকর কিছু ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা যাক, যারা মূলত নেক্রোফিলিক ছিলেন।
নেক্রোফিলিয়া নিয়ে আলোচনা হলে প্রথমেই উঠে ডা.কার্ল ভ্যান ক্যাসলের কথা।১৯৩০ সালে ফ্লোরিডায় তিনি ডাক্তারি পেশায় থাকা অবস্থায় মারিয়া এলেনা উজ নামের এক সুন্দরী টিবি রোগীর চিকিৎসা করেন। চিকিৎসা করতে করতে গভীরভাবে ওই মেয়ের প্রেমে পড়ে যান ডা. ক্যাসল। ডা. ক্যাসল মেয়েটিকে বাচাঁনোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। মারিয়ার মৃত্যুর পর তাকে জাকজমক পূর্ণভাবে সমাহিত করা হয়।কিন্তু ডা.ক্যাসল তাঁকে ভুলতে পারেন নি।প্রতিদিন তিনি সমাধিস্থ কবরে যেতেন আর এলেনর সাথে মিলিত হতেন। একটা সময় তিনি পুরো লাশ উঠিয়ে তাঁর ঘরে নিয়ে আসেন। পচন ও দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য এবং পারফিউম ব্যবহার করেন ডাক.ক্যাসল।
আরেকজন ব্যক্তি ভিক্টর আর্ডিসন।ফ্রান্সের এক ছোটো শহরে কবর খোঁড়ার কাজ করত। শতাধিক মৃতদেহের সাথে যৌন মিলন করেছে সে। পুলিশ তার ঘরে একটি তিন বছরের বাচ্চা মেয়ের মৃতদেহ পায়, যার সাথে সে যৌনকর্ম করেছিল। এমনকি সে একটি মেয়ের মাথার খুলি সবসময় কাছকাছি রাখত আর এটিকে বলত “আমার বউ”। তার ভাষ্যমতে, সে নাকি মৃতদেহের সাথে গল্প করার চেষ্টাও করত। কিন্তু যখন মৃতদেহগুলি তার কথার উত্তর দিত না, তখন সে দুঃখ পেত ও হতাশ হয়ে পড়ত। তাকে সারা জীবনের জন্য এক মানসিক রোগীদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এছাড়াও টেড বান্ডি সহ আরো অনেকেই ছিলেন সিরিয়াল কিলার এবং নেক্রোফিলিক।
ভয়াবহ এই ব্যাধি এবং অপরাধ থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং এবং এই অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এ-র জন্য পরিবারের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিংবা সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে সমাজে সচেতনতা তৈরি করার জন্য। সবাই মিলে নিশ্চিত করতে হবে একটি পবিত্র শবযাত্রা।
লেখক,
এইচ এম তৌফিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়